খড়খড়ি নদীর ধারে প্রতাপপুরে বিয়ে হয়ে সংসার করতে এসেছিলো ফেলানী। বাপের ঘর সাগরদিঘীতে আর ফিরে যাওয়া হয়নি তার। আসলে বিয়ে দেওয়ার নামে ঝাড়া হাত পা হয়েছিলো কাকা কাকিমা। সেই পাঁচ বছর বয়েস হবার আগেই যার বাপ-মা মরে হেজে যায়, তার কি আর বাপের ঘর বলে কিছু হয় ! তার ওপরে ফেলানী তো আবার বোকা হাবা। বাস কন্ডাক্টর গুলোও সে কথা জেনে গেছে। তাই কোলের মেয়ে ছানাটাকে কাঁখে করে বাসে উঠে রঘুনাথগঞ্জে যখন আসে মাঝে মধ্যে, ওরা দয়া করে ভাড়াটা আর নেয় না। অবশ্য ফেলানীর "ত" উচ্চারণ না করতে পারা ড ড করে কথা বলা নিয়ে মজা করতে তাই বলে ছাড়েনা।
ভগবান ই যখন তাঁর সৃষ্টিকে নিয়ে মজা করেছেন তখন অন্যরা ছাড়বে কেন ! পুষ্টির অভাবে ই কি না জানা নেই ফেলানী লম্বায় বেশি বাড়তে পারেনি। আপাত মোটা সোটা শরীরটা নিয়ে তখন হেলে দুলে চলে তখন তাকে দেখে তো লোকের হাসি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সেজন্যে ফেলানী কিছু মনে করেনা।
আগে অবশ্য এতোটা মোটা ও ছিলোনা। নুলো হারাধন কে বিয়ে করার পর ওদের সংসারে এসে প্রথম প্রথম শ্বাশুড়ি মা বেঁচে থাকাকালীন ধানসেদ্ধ , কাপড় কাঁচা, মাটির কোঠাবাড়ি লেপা সব কাজ করতে হলেও ভাতের অভাব ছিলনা। তরকারি, মাছ, মাংস, ডিম ছাড়া নুন-লঙ্কা দিয়েই ফেলানী যে একথালা ভাত খেয়ে নিতে পার তা বুঝেছিলেন বলে ,
উনি বরাবর একথালা ভর্তি ভাতের সাথে একটু ডাল দিতে ভুলতেন না। তবু তো বিয়ের পর পেট ভরে খেতে পেতো। তাই ফেলানী মাঝে মাঝে ভাবতো, "আগে যখন ছোটো ছিলাম টখন টো কাকিমার রেশনের মাপা খাবারই খেতে হোটো, কিন্তু এখন আমার শ্বাশুড়ি মায়ের ডরাজ হাট! আমাকে কট্ট
ভালোবাসেন! পেট ভট্টি করে খেটে ডেন।" সুখেই দিন কেটে যাচ্ছিল তার।
শ্বাশুড়ি-মা মারা যেতেই ঘটলো যত বিপত্তি! হারাধনের যেন একটা বছর অপেক্ষা করাও বড় ই কষ্ট। এই রকম বোকা বৌ দিয়ে সংসার চলেনা। মা